Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি উপকরণ ব্যবস্থাপনায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন

কৃষি উপকরণ ব্যবস্থাপনায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন
এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নামে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (ই.পি. অধ্যাদেশ ঢঢঢঠওও, ১৯৬১) এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নামে অভিহিত হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএডিসির ভিত্তি ঢাকা শহর কেন্দ্রিক হলেও এর সেবার পরিধি সমগ্র  দেশে বিস্তৃত। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আরও প্রত্যন্ত এলাকায় বিএডিসির অফিসের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত আমল থেকে কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের স্বার্থে বিএডিসির কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত করে যাচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে উন্নত মানের বীজ ও সারের ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণে বিএডিসির বলিষ্ঠ ভূমিকা সর্বমহলে স্বীকৃত।
বিএডিসির রূপকল্প এবং অভিলক্ষ্য
রূপকল্প : মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ জোগান ও দক্ষ সেচ ব্যবস্থাপনা করা।
অভিলক্ষ্য : উচ্চফলনশীল বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা, সেচ প্রযুক্তি উন্নয়ন, ভূপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার, জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে সেচ দক্ষতা ও সেচকৃত এলাকা বৃদ্ধি এবং কৃষক পর্যায়ে মানসম্পন্ন নন-নাইট্রোজেনাস সার সরবরাহ করা। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকেই বিএডিসি ফসল উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ উন্নত বীজ, সুষম সার ও ক্ষুদ্র সেচ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফসলের গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় বীজ, চারা ও কলম পৌঁছে দেয়া, ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ পানির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভতুর্কিমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন নন-নাইট্রোজেনাস সার আমদানি ও  কৃষকপর্যায়ে বিতরণ করে খাদ্য উৎপাদনে বিএডিসি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বিগত ১৩ বছরে (২০০৯-২০২১) বিএডিসি নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।
বীজ ও উদ্যান উন্নয়ন কার্যক্রম
মানসম্পন্ন ধান, গম, ভুট্টা, আলু, পাট, সবজি, ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন করে কৃষকের হাতে তুলে দিতে বিএডিসি ৩৪টি ভিত্তিবীজ বর্ধন ও উৎপাদন খামারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল এবং জাতের বীজ উৎপাদন করছে। খামারে উৎপাদিত ভিত্তিবীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে পরবর্তী বছর প্রত্যায়িত ও মানঘোষিত শ্রেণির বীজ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদন পদ্ধতির আওতায় ১ লাখ ১০ হাজার একর কমান্ড এরিয়া নিয়ে ৮৬টি কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন ও ৯৮ হাজার ৬৯৩ জন চুক্তিবদ্ধ কৃষক যুক্ত আছেন। ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬২ মে. টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৪৮টি আধুনিক বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র, ৩টি অটো সিড প্রসেসিং প্লান্ট, ৩০টি বীজআলু হিমাগার এবং ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় বীজ পরীক্ষাগার ও দেশব্যাপী ট্রানজিট বীজ গুদামসহ ১০০টি বীজ বিক্রয় কেন্দ্র, ৮ হাজার ৩০৫ জন বীজ ডিলার নিয়ে একটি সুসংগঠিত মার্কেটিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বীজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে অভ্যন্তরীণ মাননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪টি এগ্রো সার্ভিস সেন্টার ও ৯টি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফল-ফুল, বনজ, ঔষধি, মসলা ও সবজি চারা/কলম উৎপাদনসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ প্রর্দশনী ও সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

বিগত ১৩ বছরে (২০০৯-২০২১) বিএডিসি সর্বমোট ১৬,১৮,৯৯৬ মেট্রিক টন দানাদার ফসলের বীজ, ৪০,৯২৫ মে. টন ডাল জাতীয়, ৪৬,৫১১ মে. টন তেলজাতীয় বীজ, ৯,৮০,৮৯০ মে. টন আলুবীজ, ১০,৯৪৪ মে. টন পাটবীজ, ১,২৩৭ মে. টন সবজি বীজ ও ২,০০৯ মে. টন মসলা বীজ  কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করেছে। বিএডিসি বিগত ২০১০-১১ হতে ২০২০-২১ সময়ে সমন্বিত মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্প ও এগ্রো সার্ভিস সেন্টার কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩২.২২ লাখ মে. টন সবজি; ০.০৫৬ লাখ মে. টন মসলা; ৫.৪৩ লাখ মে. টন ফল; ৩৩২৮.৭২ লাখ সবজি চারা/চারা/কলম/গুটি ও ৪৪.৬৪ লাখ নারিকেল চারা উৎপাদন ও বিতরণ করেছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে সবজি, ফল, মসলা ইত্যাদির জাতীয় উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকপর্যায়ে মানসম্পন্ন উদ্যান ফসলের চারা বিতরণের ফলে দেশব্যাপী উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। বিএডিসির গবেষণা সেলের মাধ্যমে ৪২টি গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএডিসির নামে ফলের ৬টি জাত এবং সরিষার ১টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরিসহ আরও ৪টি টিস্যু কালচার ল্যাবেরেটরির মাধ্যমে আলুবীজের প্লান্টলেট এবং বিভিন্ন ফলের চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে বীজআলু আমদানি শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।
ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম 

বিএডিসির মাধ্যমে ১৯৬০ এর দশকে মাত্র ১,৫৫৫টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে বাংলাদেশে আধুনিক সেচ ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। এ পরিক্রমায় বর্তমানে ২০২০-২১ সেচ মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৬.৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে দেশের প্রায় ৭২.৫% সেচযোগ্য জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। রবি মৌসুমে ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে ৯৫% এবং বৃহৎ সেচের মাধ্যমে ৫% জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে ভউপরিস্থ পানির সাহায্যে ২৭.১০% এবং ভূগর্ভস্থ পানির সাহায্যে ৭২.৯০% জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে।
বিএডিসি কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে মোট ৯৫টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্প এবং ১৫৯টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 
বিগত ১৩ বছরে (২০০৯-২০২১) বিএডিসির মাধ্যমে সেচকৃত এলাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে :

ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানো এবং ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে ৯,৫৬২ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করে ১,৪৮,১০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। বিএডিসি ১২টি খাল/নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করেছে। উক্ত ১২টি রাবার ড্যাম চালুর মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রায় ৮,৩০০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে এবং আগাম বন্যার হাত হতে ৭০০০ হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

দেশে প্রথমবারের মত বিএডিসির মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় ভরাশঙ্খ খালে এবং কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ায় অত্যাধুনিক পযুক্তিনির্ভর দুইটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। উক্ত ড্যাম দুইটি নির্মাণের ফলে অতিরিক্ত ২,০৫০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে

বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে ২,৯১২ কিলোমিটার ভূউপরিস্থ পাকা সেচনালা এবং ১০,৪৯১ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ (বারিড পাইপ) সেচনালা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পানির অপচয় হ্রাস ও সেচদক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। ২৯০টি বিভিন্ন ক্ষমতার সৌরশক্তিচালিত সেচপাম্প স্থাপন, ২৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ এবং ৮,৬৬৮টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সেচ অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে সাবমার্জড ওয়্যার, স্লুøুইচগেট, বক্স কালভার্ট, পাইপ কালভার্ট, ক্যাটল ক্রসিং ইত্যাদি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কুলিং কাজে ব্যবহৃত গরম পানি পানি ঠান্ডা করে বিএডিসির নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলার প্রায় ২২,০০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। গ্র্যাভিটেশনাল ফ্লোর মাধ্যমে অধিকাংশ স্থানে সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে নামমাত্র মূল্যে  কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছে। 

পার্বত্য এলাকা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার পাহাড়ি এলাকায় ৮৬টি ঝিরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ছোট ছোট ঝরনায় এসব বাঁধ নির্মাণ করে ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ফসলে সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফলে উক্ত এলাকায় ১৫০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ৪৭৫টি আর্টেশিয়ান নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কোন সেচযন্ত্র ছাড়াই আর্টেসিয়ান নলকূপের মাধ্যমে ক্রমাগত পানি উঠে আসে। এ পানি ব্যবহার করে প্রায় ৬৭৫ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ২,৪৫৮টি গভীর নলকূপে স্মার্ট কার্ড বেইজড প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। স্মার্ট কার্ড বেইজড প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ফলে সেচচার্জ আদায় সহজতর হয়েছে। কৃষকগণ ফসলে সঠিক সময়ে ও পরিমাণমতো সেচ দিতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ভূউপরিস্থ পানি নেই, সেই সকল এলাকায় বিএডিসির মাধ্যমে ৬৮টি ডাগওয়েল ও ১০১টি সৌরশক্তি চালিত ডাগওয়েল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণকৃত ডাগওয়েলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ২০০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএডিসির মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ৭,১৫২টি শক্তিচালিত এলএলপি স্থাপন, ১,৬৪৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ১,৬৬৮টি গভীর নলকূপ পুনর্বাসন ও ২০২টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। বিএডিসির মাধ্যমে সেচের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ৯টি স্প্রিংকলার সেচ ব্যবস্থার প্রদর্শনী প্লট, ৮৭টি ড্রিপ সেচ ব্যবস্থার প্রদর্শনী প্লট ও ৭টি নিরাপদ ফুল ও সবজি উৎপাদন পলিশেড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৯৩টি সেচের অফিস ভবন নির্মাণ ও ৩৫টি ভবন সংস্কার করা হয়েছে। 

বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ উইংয়ের মাধ্যমে ১,৩২,৯৩৪ জন কৃষককে বিভিন্ন প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পানির অপচয় হ্রাস ও কৃষক পর্যায়ে সেচদক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। জরিপ ও পরিবীক্ষণ ডিজিটালাইজেশনকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০টি ডাটা লগার স্থাপনপূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির লেভেলের গভীরতা নির্ণয় করা হচ্ছে এবং বিএডিসির কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণপূর্বক বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।

বিএডিসি সারাদেশে উপরোক্ত কার্যক্রমের গুণগতমান শতভাগ ঠিক রেখে সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করেছে। বিএডিসির কারিগরি সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সেচ এলাকা ৫১.২৬ লাখ হেক্টর হতে ৫৬.৫৪ লাখ হেক্টর, সেচদক্ষতা ৩৫% হতে ৩৮% এবং ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার ২১% হতে ২৭% উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে।
সার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম

বিএডিসি সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশ হতে গুনগত মানসম্পন্ন নন-নাইট্রোজেনাস সার (টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি) আমদানি করে। বিএডিসি কর্তৃক তিউনিশিয়া ও মরক্কো হতে টিএসপি, বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা হতে এমওপি, সৌদি আরব ও মরক্কো হতে ডিএপি সার আমদানি করা হয়। আমদানিকৃত নন-নাইট্রোজেনাস সার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভতুর্কি মূল্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ মোতাবেক কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সরকারি ভতুর্কি মূল্যের ফলে কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখছে। কৃষক পর্যায়ে নন-নাইট্রোজেনাস সারের হ্রাসকৃত মূল্যের তালিকা সারণি দ্রষ্টব্য। ২০০৯ সালে বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার গঠনের পর কৃষকদের নিকট গুণগত মানসম্পন্ন টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারের দাম দফায় দফায় হ্রাস করা হয়।

বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে জরাজীর্ণ/ব্যবহার অনুপযোগী গুদাম/স্থাপনা পুনরায় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যেখানে বিএডিসির গুদামের ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ৯৮,০০০ মে. টন সেখানে বর্তমানে বিএডিসির ১৩২টি গুদামের মোট ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ২,০৯,৬৩৩ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। আরও ১ লাখ মে.টন সার গুদাম নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। অধিকন্তু ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে পর্যায়ক্রমে তা ৮ লাখ মে. টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারগুলোতে জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন শুরু হয়েছে।
বিএডিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কৃষকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ফসলের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহের নিমিত্ত নতুন খামার ও কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন স্থাপন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণের  উদ্যোগ গ্রহণ। প্রতিকূলতাসহিষ্ণু জাতের বীজ উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধিকরণ। জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে টিস্যুকালচার ল্যাবের মাধ্যমে আলুবীজের মৌল শ্রেণির রোগমুক্ত বীজ উৎপাদন ও বিতরণের মাধ্যমে বিদেশ হতে প্রজনন শ্রেণির আলুবীজ আমদানি নির্ভরতা কমানো।

এ ছাড়া এসডিজি, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অংশ হিসেবে ফসলের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে বীজ ও উদ্যান উইং এর আওতায় বীজ সংগ্রহ ১৪৯৫০২.১৪ মে. টন হতে বৃদ্ধি করে ২০৫০০০.০০ মে. টন উন্নীত করাসহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে পোস্ট হার্ভেস্ট লস কমানো এবং লেবার প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিএডিসির খামার, উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের খাদ্য চাহিদা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্রসেচ উইং এর আওতায় ৬.১৪ লাখ হেক্টর সেচ এলাকা টেকসইকরণ, সেচ দক্ষতা ৩৮% হতে ৫০% উন্নীতিকরণ, সেচ কাজে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০% এ উন্নীতিকরণ এবং সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ৭০% এ হ্রাস করাসহ নানাবিধি বহুমূখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ সকল কার্যক্রম পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ বা এসডিজি গোল ৬.৪ বাস্তবায়ন সহায়তা করবে এবং কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। সার ব্যবস্থাপনা উইং এর আওতায় ০২ লাখ মে. টন হতে ০৭ লাখ মে. টন ধারণ ক্ষমতায় উন্নীতকরণের মাধ্যমে সার সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার টেকসই রূপ দিতে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, যান্ত্রিকীকরণ এবং রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের উপকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসির কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার মহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিএডিসির আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।


লেখক : চেয়ারম্যান, বিএডিসি, ফোন : ২২৩৩৮৪৩৫৮, ই-মেইল :chairman@badc.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon